ad

১৪ এপ্রিল ১৯৭১: শেষ বাংলা বর্ষে মুক্তিযুদ্ধের দৃঢ় ঘোষণা

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৬ এএম
১৪ এপ্রিল ১৯৭১: শেষ বাংলা বর্ষে মুক্তিযুদ্ধের দৃঢ় ঘোষণা

বাংলা ১৩৭৭ সালের শেষ দিনে, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক নতুন বাঁকে মোড় নেয়। মুক্তিযুদ্ধের সরকার জনগণকে নববর্ষের আগমনে শুভেচ্ছা জানালেও, দিনটি ছিল দৃঢ় বার্তা ও আন্তর্জাতিক অনুরোধে ভরপুর।

তাজউদ্দীন আহমদের আহ্বান বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি গঠনমূলক বিবৃতি দেন। তিনি বন্ধুরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংগঠন, কূটনৈতিক মহল ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে বাস্তব অবস্থা পরিদর্শনের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান, তারা যেন পাকিস্তানি বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ না করে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতার সংগ্রামে সহায়তা করে।

মুক্তিযুদ্ধের দশ নির্দেশনা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সেদিন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের উদ্দেশ্যে দশ দফা নির্দেশনা প্রচার করা হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা শোষণমুক্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে গঠিত হয় মন্ত্রিসভা, যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জাতির সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্বজুড়ে তখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে।

জেনেভায় আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ কমিশনের মহাসচিব ম্যাকডরমট পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইয়াহিয়া খানকে টেলিগ্রাম পাঠান। তিনি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্পন্ন বেসামরিক আদালতেই হয়, সে দাবিও জানান।

ভারতের দিল্লিতে, ‘সর্বভারতীয় সাহায্য সংস্থা’ নামে এক নতুন সংগঠনের জন্ম হয়, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। এম সি চাগলা চেয়ারম্যান এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে, সিনেটর এডমন্ড মাস্কি প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানান পূর্ব পাকিস্তানের সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট না হলেও পাওয়া তথ্যে যা প্রতিফলিত হয়, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা।

নিউইয়র্ক টাইমস-এ সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের লেখা তিনটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে পূর্ব পাকিস্তানের ভয়াবহতা উঠে আসে। এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল— “অব্যাহত হত্যাযজ্ঞের মধ্যে বাঙালিদের মন্ত্রিসভা গঠন”, যেখানে বলা হয়, প্রাণে বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ মানুষ প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ময়দান: ১৪ এপ্রিলের সংঘর্ষ ও বিজয় দিনটি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিংস্র ও সাহসী প্রতিরোধের সাক্ষী হয়ে আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে পাকিস্তান বিমানবাহিনী দিনব্যাপী বোমাবর্ষণ করে, যাতে বহু মানুষ প্রাণ হারায়।

কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে একটি বড় পাকিস্তানি সেনাদল উজানিসার সেতুর কাছে পৌঁছালে তারা চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল ও ইপিআরের যৌথ প্রতিরোধে পড়ে।

কসবায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল আক্রমণ চালিয়ে এলাকা পুনরুদ্ধার করে।

রাজশাহীতে, ঢাকাগামী পাকসেনারা শহরের প্রান্তে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাধা দিলেও সেনারা ঢুকে পড়ে এবং অন্তত ৩০ জন বেসামরিক নাগরিককে ধরে একটি স্কুলে গুলি করে হত্যা করে।

ভেড়ামারায়, ভোরে পাকসেনারা পাকশি রেলসেতুর কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে হামলা চালায় এবং তীব্র লড়াইয়ের পর এলাকা দখল করে।

ঘোড়াঘাট-হিলি সড়কে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকসেনাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়।

সান্তাহারে, পাকিস্তানি সেনারা অবাঙালি সহযোগীদের সঙ্গে একত্র হয়ে বহু বাঙালিকে হত্যা করে। এই ঘটনা ‘সান্তাহার গণহত্যা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

পাকিস্তানি সহযোগীদের বৈঠক এই দিনে ঢাকায় শান্তি কমিটির স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেজামে ইসলামের প্রধান মৌলভি ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে পাকিস্তানের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেওয়া হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

তথ্যসূত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র (খণ্ড ২ ও ১৩), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর ২ ও ৭), দৈনিক পাকিস্তান (১৫ এপ্রিল ১৯৭১)

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৪ এপ্রিল ১৯৭১: শেষ বাংলা বর্ষে মুক্তিযুদ্ধের দৃঢ় ঘোষণা

১৩ এপ্রিল ১৯৭১: এক নজরে মুক্তিযুদ্ধের মাঠে এবং বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

৯ এপ্রিল, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে

চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা: প্রাণে বাঁচলেও আতঙ্কে পরিবার

চালবাজিতে চাল, মানুষের অবস্থা বেহাল

ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায়

ধানমন্ডিতে র‍্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেফতার ৪

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় খসড়া চূড়ান্ত

গাজায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশুর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

ইসরাইল ও নেতানিয়াহুর ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে বেশিরভাগ কানাডিয়ান

১০

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হামাস মুখপাত্র নিহত

১১

ক্লাব বিশ্বকাপে রেকর্ড প্রাইজমানি!

১২

বাংলাদেশ মাতিয়ে ইংল্যান্ডের পথে হামজা চৌধুরী

১৩

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ / দেশে ফের বার্ড ফ্লু শনাক্ত, সতর্কতা জোরদার

১৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আসামি

১৫

এএফপি’র সাংবাদিক গ্রেপ্তার, সমালোচনার মুখে এরদোয়ান

১৬

‘নো অর্ডার’ আদেশের ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

১৭

বৃহস্পতিবার ঢাকার যেসব এলাকায় ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

১৮

ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ, বৃহস্পতিবার থেকে বাড়বে ভিড়

১৯

ঢাকায় আজ শুষ্ক থাকবে আবহাওয়া, বাড়বে গরমের অনুভূতি

২০